
মীর আব্দুর রাজ্জাক
পটভূমি : ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য তিকর। বিশেষকরে পরো ধূমপানের তি আরও মারাত্বক। একসময় পরো ধূমপানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা পাবলিক পরিবহনে ধূমপানরত কাউকে ধূমপান করতে নিষেধ করলে ধূমপায়ী বলত পারলে আপনি প্রাইভেটে যান। বেশীরভাগ অফিসে এসট্রে শোভা পেত। অফিস প্রধানের সামনে দামি ব্রান্ডের সিগারেটের প্যাকেট থাকাটা আভিজ্যাতের বিষয় মনে করত। এতাবস্থায় সরকার জনস্বাস্থ্য বিবেচনা করে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ প্রণয়ন করেন। যা বাস্তবায়নে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। কার্যক্রম শুরুর দিকে দেখা বিভিন্ন জায়গায় মানুষ ধূমপান করছে, কোথাও কোথাও সিগারেটের বাট পড়ে আছে, কোন অফিসে আবার এসট্রে আছে, কখনও অফিসে সরাসরি ধূমপানরত অবস্থায় প্রবেশ করতে দেখা গেছে। অনেকে পরো ধূমপানের জন্য অসস্তি বোধ করেছে কিন্ত কিছু বলতে পারেনি। এই পর্যায়ে আইন প্রনয়নকে মানুষ স্বাগত জানায়।
টাস্কফোর্স কমিটি গঠন : আইনের ফলে জাতীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়েছে। কুষ্টিয়ায় ২৬ মে ২০০৮ সালে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট জেলা টাস্কফোর্স কমিটি গঠিত হয়। ফলে প্রতি তিন মাস অন্তর নিয়মিত টাস্কফোর্স মিটিং অনুষ্ঠিত হচ্ছে যেখানে আইন বাস্তবায়নে বিভিন্ন পদপে গ্রহন ও কার্যকর করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিগারেট কোং বিলবোর্ড অপসারণ : জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তামাক কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা তথা বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়।
সিগারেট কোং বিলবোর্ড অপসারণ : জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে তামাক কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা তথা বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়।
মোবাইল কোর্ট : মাঝেমধ্যেই আইন বাস্তবায়নে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। অনেক সময় নিয়মিত কাজের অংশ হিসাবে অন্য মোবাইল কোর্ট এর পাশাপাশিও পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান বিরোধী মোবাইল কোট পরিচালিত হয়।
মতবিনিময় সভা : জেলার বিভিন্ন বিভাগ বা পর্যায়ের অফিস প্রধান, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, ছাত্র, বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধি, ইমাম, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, কৃষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কে মতবিনিময় সভা করা হয়।
র্যালি ও মানব বন্ধন : তামাক বিরোধী র্যালি সাধারণত আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে শুরু করি অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ করি যাতে করে এর প্রভাব জেলার সকল পর্যায়ে পড়ে।
র্যালি ও মানব বন্ধন : তামাক বিরোধী র্যালি সাধারণত আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে শুরু করি অথবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ করি যাতে করে এর প্রভাব জেলার সকল পর্যায়ে পড়ে।
বিলর্বোড ও সাইন বোর্ড স্থাপন : জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রবেশের প্রধান ফটকের বাম পাশে ধূমপান বা তামাক বিরোধী বড় বিলর্বোড স্থাপন করা হয়েছে। যাতে করে রাস্তায় চলাচল ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় আসা ব্যক্তিরা সচেতন হতে পারে। এছাড়াও ভবনের বিভিন্ন জায়গায় সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে।
স্টিকার লাগানো : জেলার বিভিন্ন জায়গায় নো-স্মোকিং স্টিকার লাগানোসহ বিভিন্ন সাইনেজ প্রর্দশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মাইকিং : জেলা তথ্য অফিস ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর সহযোগিতায় তামাক বিরোধী প্রচারণা চালনা হয়েছে।
শর্ট ফিম প্রদর্শন : জেলা তথ্য অফিসের সহযোগিতায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে ধূমপান বিরোধী নাটক প্রদর্শন এবং স্থানীয় কেবল টিভির মাধ্যমেও নাটক দেখানো হয়েছে।
মনিটরিং : টাস্কফোর্স মিটিং এর মাধ্যমে আলাদা একটা গ্র“প করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। যা নিয়মিত কাজ করে চলেছে।
মনিটরিং : টাস্কফোর্স মিটিং এর মাধ্যমে আলাদা একটা গ্র“প করে মনিটরিং টিম গঠন করা হয়। যা নিয়মিত কাজ করে চলেছে।
মিডিয়া কাভারেজ : তামাক ও ধূমপান বিরোধী নিউজ নিয়মিত ছাপাতে মিডিয়াগুলোতে যোগাযোগ, উদ্বুদ্ধ ও তথ্য সরবরাহ করা হয়। যার মাধ্যমে সচেতনতা লাভ করেছে।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে উদ্বুদ্ধ : তামাক বিরোধী কাজ করার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনকে অনুপ্রাণিত করা হয় ও ম্যাটিরিয়ালস সরবরাহ করা হয়।
ধূমপানমুক্ত কুষ্টিয়া শহর প্রচারাভিযান : গত ০৮ ফেব্রয়ারী ২০১১ তারিখে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ হতে কুষ্টিয়া শহর ধূমপানমুক্ত প্রচারাভিযান শুরু করা হয়।
ভ্রাম্যমান জারীগান : তামাক বিরোধী জারীগান পিকআপে করে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সম্পূর্ণ করা হয়।
অন্যদের আয়োজিত প্রোগ্রামে অংশগ্রহন : জেলায় অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামে অতিথি হিসাবে সুযোগ নিয়ে তামাক বিরোধী বক্তব্য প্রদান ও সচেতনা বৃদ্ধিতে দায়িত্বশীলের ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।
মেলায় অংশগ্রহন: জেলায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আয়োজিত মেলায় স্টল নিয়ে তামাক বিরোধী প্রচারণা ও স্বারগ্রহন করা হয়।
ধূমপানমুক্ত কুষ্টিয়া শহর প্রচারাভিযান : গত ০৮ ফেব্রয়ারী ২০১১ তারিখে কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরী মাঠ হতে কুষ্টিয়া শহর ধূমপানমুক্ত প্রচারাভিযান শুরু করা হয়।
ভ্রাম্যমান জারীগান : তামাক বিরোধী জারীগান পিকআপে করে বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সম্পূর্ণ করা হয়।
অন্যদের আয়োজিত প্রোগ্রামে অংশগ্রহন : জেলায় অন্য যে কোন প্রতিষ্ঠানের প্রোগ্রামে অতিথি হিসাবে সুযোগ নিয়ে তামাক বিরোধী বক্তব্য প্রদান ও সচেতনা বৃদ্ধিতে দায়িত্বশীলের ভূমিকা রাখার আহবান জানানো হয়।
মেলায় অংশগ্রহন: জেলায় সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আয়োজিত মেলায় স্টল নিয়ে তামাক বিরোধী প্রচারণা ও স্বারগ্রহন করা হয়।
বিশাল ব্যানার প্রদর্শন : বিজয় দিবসে স্টেডিয়াম মাঠে ১২৪ স্কয়ার ফিট ধূমপান/তামাক বিরোধী ব্যানার প্রদর্শন করা হয়। যেখানে পরে ফটো সেশনে অংশগ্রহন করেন ডিসি,এসপি,সিএসসহ জেলার উচ্চ পদস্থ সমস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষনা : জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে ধূমপানমুক্ত ঘোষনা করা ও সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়। যা দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়।
ধূমপানমুক্ত এলাকা ঘোষনা : জেলার গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্লেসগুলো আনুষ্ঠানিক ভাবে ধূমপানমুক্ত ঘোষনা করা ও সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়। যা দৈনিক পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়।
সিগারেট কোং তৎপরতা : সিগারেট কোম্পানিগুলো আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে বিভিন্ন কায়দার বিজ্ঞাপন প্রচার, বিনা মূল্যে সিগারেট প্রদান, মহিলা প্রমোটর নিয়োগ ও বিভিন্ন কায়দায় পুরস্কার প্রদান করে চলেছে। যা ধূমপায়ীদের আরও আকৃষ্ট করছে এবং নতুন প্রজন্মের মধ্যে নতুন ধূমপায়ীও অনেক েেত্র তৈরী হচ্ছে। এেেত্র আইন উন্নয়ন ও বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী। পাবলিক প্লেস এলাকায় তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় বন্ধ করা অপরিহার্য।
মূল্যায়ন : তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।
মূল্যায়ন : তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন।
গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা :
বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনসহ জেলার অন্যান্য পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রভাব পড়েছে। কোন অফিসে কাউকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখা যায় নাই। তবে আইন সর্ম্পকে আরও প্রচারণা, বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ, মাইকিং. আলোচনা সভা, বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সহিত মতবিনিময়, নাটক,জারীগাণ,বিআরটি এর মাসিক মিটিংএ আলোচনা রাখা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। জেলায় মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় মিটিংএ এজেন্ডা হিসাবে আলোচনা করতে হবে। সর্বপোরী কর্মকর্তারা যেন ধূমপানের উদাহরণ না হয় সেই দিকে ল্য রাখার অনুরোধ জানান।
বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনসহ জেলার অন্যান্য পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রভাব পড়েছে। কোন অফিসে কাউকে ধূমপানরত অবস্থায় দেখা যায় নাই। তবে আইন সর্ম্পকে আরও প্রচারণা, বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ, মাইকিং. আলোচনা সভা, বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের সহিত মতবিনিময়, নাটক,জারীগাণ,বিআরটি এর মাসিক মিটিংএ আলোচনা রাখা ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রাখতে হবে। জেলায় মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় মিটিংএ এজেন্ডা হিসাবে আলোচনা করতে হবে। সর্বপোরী কর্মকর্তারা যেন ধূমপানের উদাহরণ না হয় সেই দিকে ল্য রাখার অনুরোধ জানান।
মূল্যায়ন : সর্বপোরী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রভাব কুষ্টিয়ায় পড়েছে। কোন পাবলিক প্লেসে অবাধে ধূমপানরত অবস্থায় দেখা যায় না। দেখলেও জনসাধারন প্রতিবাদ করে। মিডিয়ারা আইন ভঙ্গের বিষয় তুলে ধরে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি ওয়াচ ডগ হিসাবে কাজ করছে। তাতে দেখা যায় ৯০-৯৫% পাবলিক প্লেস ও পরিবহন ধূমপানমুক্ত। পাবলিক পরিবহন ট্রেন ও বাসে ধূমপান করতে তেমন দেখা যায় না। লোকাল ট্রেনে শ্রমিক শ্রেণীর মানুষকে মাঝে মধ্যে ধূমপান করতে দেখা যায়। টিসি অফিস হতে প্লাটফরম গুলোতে স্টেশনের মাইক দ্বারা ধূমপান বিরোধী প্রচারনা চালানো হয়। জনগণ মনে করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি অন্যান্য আইনের তুলনাই মানুষ নিজের মনে করে গ্রহন করেছে এবং তা বাস্তবায়নে অংশগ্রহন করেছে।
উপসংহার : তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের এই সফলতা ধরে রাখার জন্য চলমান কার্যক্রম হিসাবে কিছু কাজ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন এবং এটাকে সামাজিক অগ্রহনযোগ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।। মানুষ তামাকের প্রতো ও পরো তি হতে রা পাক সুস্থ্য সবল জাতী হিসাবে প্রতিটা মানুষ মানব সম্পদে পরিণত হয়ে অঅত্মনির্ভরশীল হোক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

গৌতম কুমার রায়
১৯৭১ সাল। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কুষ্টিয়া পরিচয় পেয়েছিল দেশে প্রথম স্বাধীন রাজধানীর হিসেবে। এছাড়া নিজস্ব পরিমন্ডলে সাহিত্যাঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কারণে কুষ্টিয়া দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীও বটে। কুষ্টিয়া তামাকের রাজধানী হিসেবেও পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্তমানে দেশের ১৫টি জেলায় প্রায় .৭৪ লাখ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়। সারা দেশে যে পরিমাণ তামাক উৎপাদন হয় তার প্রায় অর্ধেক উৎপাদন হয় কুষ্টিয়া থেকে।
শুরুতে ুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির মানুষ পাহাড়ে মশা জাতীয় রক্ত চোঁষা বিষাক্ত কীটের হাত থেকে বাঁচার জন্য বসতির আশেপাশে তামাক চাষ করতেন। কুষ্টিয়াঞ্চলে সেই তামাক চাষ শুরু হয় ১৯৭৫ সালে। রংপুরের তামাকের গুণগতমান যখন নামতে থাকে তখন বাংলাদেশ টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর (বিটিসি) নজরে আসে কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর ও মীরপুর উপজেলার উর্বরা জমি। ১৯৭৫ সালের দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের দর্গা গ্রামের কালু বিশ্বাসকে দিয়ে বিটিসি প্রথম তামাক চাষের সূচনা করে। এর পর ৮০ সালের দিকেই তা ছড়িয়ে পরে ভেড়ামারা ও মিরপুরে । তারপর অধিকাংশ অঞ্চলগুলোতে শুরু হয় তামাকের চাষ। গত ৫ বছরে কুষ্টিয়ায় তামাক চাষের গড় জমির হিসেব .২২ লাখ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে যা খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য হুমকি স্বরূপ। বর্তমান বাংলাদেশের ১৫টি জেলাকে তামাক জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে তামাক কোম্পানি। এর মধ্যে উৎপাদনের দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে কুষ্টিয়া। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে কুষ্টিয়ায় তামাক চাষ হয় .২৮ লাখ হেক্টর । ২০১০-১১ অর্থ বছরে চাষ হয় .২৬ লাখ হেক্টর। ২০১১-১২ অর্থ বছরে চাষ হয় .২৫ লাখ হেক্টর এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে চাষ হয়েছে .২৬ লাখ হেক্টর জমিতে। কুষ্টিয়ায় তামাকের চাষ দ্্রুত বিস্তারলাভ করছে। ছড়িয়ে পড়েছে ফসলের মাঠ থেকে ঘরের আঙিনা পর্যন্ত। আর নেপথ্যের কারণ হলো কৃষককে সরাসরি বাড়তি সুযোগ-সুবিধা প্রদান। তামাকের চারা রোপণ থেকে প্রক্রিয়াজাত পর্যন্ত সার, কীটনাশকসহ নানাবিধ উপকরণের জোগান দেয় তামাক কোম্পানিগুলো। এমনকি তারাই কৃষকের কাছ থেকে তামাক কিনে নেই। তাই ধান, পাট, সবজি উৎপাদন করে লোকসান ও বিক্রির অনিশ্চতা থেকে তামাক চাষের দিকেই ঝুঁকছেন কৃষক।
তামাকের ভালো ফলন পেতে বার বার সার ও কীটনাশকের ব্যবহার প্রয়োজন হয়। বীজতলাতে যেন ঘুঘরে পোকা না আসে যে জন্য ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন ব্রান্
ডের বিষ। চারা গজিয়ে গেলে প্রয়োজন হয় এগ্রোডাম, কৃষাণ, রণভিট, সুমিথিওনসহ রেডোমিল পাউডার প্রভৃতি। ছত্রাক ধ্বংস করতে রয়েছে ছত্রাকনাশক বিভিন্ন ব্রান্ডের বিষ। এছাড়া তামাক েেত ব্যবহার করা হয় বস্তা বস্তা অপরিকল্পিত সার। ভালো ফলনের জন্য কখনো কখনো মাটিতে লবণ দেওয়া হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বাড়তি রাসায়ানিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার দুটোই জমি এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক তিকর। দিন দিন অপরিকল্পিত সার, লবণ, ছাই এবং কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দিন দিন মাটি হয়ে ওঠে অনবাদি। জলাশয়ে মাছের সাথে বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে হাজারো জলজপ্রাণী, পশুপাখি ও কীটপতঙ্গ। তামাক চাষের বিভিন্ন পর্যায় মা ও শিশুরা কাজ করে বলে তাদের শারীরিক অমতা তৈরি হচ্ছে। যে জন্য অল্প বয়সেই মা ও শিশুরা পতিত হচ্ছে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে। শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারের ফলে একজন মানুষের বমি বমি ভাব, জ্বর, ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, মাজা ব্যথা, শারীরিক দুর্বলতাসহ নানান জঠিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তামাকের নানামুখী তিকর দিকের কারণে একে বিষবৃ হিসেবে অভিহিত করছেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
তামাক প্রক্রিজাত করতে ধ্বংস হচ্ছে বনজ সম্পদ। উবিনীগের এক তথ্যানুযায়ী প্রতি কিলোগ্রাম তামাক পোড়াতে প্রয়োজন হয় ৫ কেজি জ্বালানির। প্রতি মৌসুমে একর প্রতি জমির তামাক শোধনের জন্য লাগে ৫ মেট্রিকটন জ্বালানি। এ সব জ্বালানির জোগান আসে আম, কাঁঠাল, সেগুন, গর্জন, জাম, কড়ই প্রভৃতি বনজ ও ফলদ বৃ থেকে। তাহলে সারা দেশের উৎপাদিত তামাক প্রক্রিয়াজাত করতে কত মেট্রিকটন জ্বালানির প্রয়োজন হচ্ছে তা আমাদেরকে সত্যি ভাবিয়ে তোলে।
বছরের পর বছর তামাক উৎপাদনের ফলে কুষ্টিয়ার উর্বরা আবাদি জমি তামাকের বিষক্রিয়ায় হয়ে যাচ্ছে অনাবাদি। এক জমিতে তামাক আর পাশের জমিতে ধান বা অন্য ফসল আবাদ করলে তামাকের তিকর প্রভাব পড়ে ওই ফসলি জমির ওপর। এভাবেই অনিশ্চয় মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। আউশ, আমন, বোরো ছাড়াও উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে সবজিসহ দানা শস্যে। প্রাকৃতিক গো-খাদ্যের আকাল দেখা দিচ্ছে। ধান, পাট, তৈল বীজ, ডাল ও মসলা জাতীয় খাদ্যের পরিমাণগত ও মানসম্পন্নতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। জীববৈচিত্র্যে পরিলতি হচ্ছে বিরূপ প্রভাব। তামাকের রাহুগ্রাস থেকে বেরোতে তাই প্রয়োজন সর্বস্তরের সচেতনতা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন