বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী, ২০১৪

কুষ্টিয়ায় এক বছরে ৩৬ নারী খুন: ২০ জন ধর্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারীদের জন্য আতঙ্কের জন পদ কুষ্টিয়া। ঘরে বাইরে সবখানেই অনিরাপদ কুষ্টিয়ার নারীরা। উদ্বেগ জনক হারে বেড়েছে, খুন, ধর্ষন, নির্যাতনসহ নানা ধরনের সহিংস মুলক ঘটনা। যৌতুকের কারনে হত্যা, পারিবারিক বিরোধের জেরধরে হত্যা, নির্যাতনের পর হত্যা, ধর্ষন করে হত্যাসহ বিভিন্ন কায়দায় গত এক বছরে কুষ্টিয়ায় ৩৬ নারী খুন ও ২০ নারী ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। হত্যকান্ড থেকে বাদ পড়েনি নিস্পাপ শিশু, বুদ্ধা কিংবা যুবতী কেউ। আবার এসব নারীদের মধ্যে কেউ কেউ হয়েছেন অপরাধীদের লালসার শিকার। হত্যকান্ডের পর শরীরের বিভিন্ন অংশ খন্ড বিখন্ডের ঘটনাও রয়েছে। অনেক সময় শ্বাসরোধে হত্যার পর আতœহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া ঘটনাও নেহাত কম নয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে জেলায় গত এক বছরে জেলায় ৩৬ জন নারী হত্যাকান্ডের শিকার এবং ২০জন নারী ধর্ষিত হয়েছে। সুত্র জানায়, ২৫ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ১২ বছরের এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার আড়িয়া ইউনিয়নের ইউসুফপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর মৃত লাশ উদ্ধার করা হয় একটি ইট ভাটার পুকুর থেকে। ১ ফেব্রুয়ারী কুমারখালিতে নাসিমা খাতুন (২৫) নামের এক গৃহবধুকে যৌতুকের দাবিতে শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগ উঠে।

কুষ্টিয়ায় এক বছরে ৬৭৩ অগ্নিকান্ড

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় এক বছরে ৬৭৩টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ ঘটনার েেত্রই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে গ্রাম এলাকার তামাকচুল্লি ও পানের বরজের পাটকাঠির বেড়া থেকে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রামগঞ্জের জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় অগ্নিকা-ের ঘটনা বেশি ঘটছে। কুষ্টিয়ার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় থেকে জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে ১১২টি, ফেব্রুয়ারিতে ১২৩, মার্চে ৩১০, এপ্রিলের ১২৮টি অগিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ৫০ কোটি টাকার তি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৯ মার্চ মিরপুর উপজেলার পাহাড়পুর ও আমকাঁঠালিয়া গ্রামে তামাকের চুল্লিতে আগুন লাগে। ২৪ মার্চ একই উপজেলার ছাতিয়ান, পাহাড়পুর, ধুবইল ও চিথলিয়া গ্রামে তামাকের চুল্লিতে আগুন লেগে ব্যাপক তি হয়। এসব জায়গায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততণে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

৪ মার্চ ভেড়ামার রতনদিয়া, ১৮ মার্চ দৌলতপুরের মথুরাপুর, ১৯ মার্চ ভেড়ামারার বাহাদুরপুর, ২৩ মার্চ চককৃষণপুর, ২৪ মার্চ মাহাদেব ও ২৭ মার্চ মেঘনাপাড়ায় পানের বরজে আগুন লেগে ব্যাপক য়তি হয়। জানা যায়, দেশের মধ্যে বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় তামাকের আবাদ হয় সবচেয়ে বেশি। এ
সব তামাক পোড়াতে চুল্লি তৈরি করা হয়। এ ছাড়া এ অঞ্চলে প্রচুর পানের বরজ রয়েছে। পানের বরজের বেড়া তৈরির প্রধান উপকরণ হচ্ছে পাঠকাঠি। সরেজমিনে দেখা গেছে, তামাক পোড়ানোর জন্য বাড়ির উঠানে বা বসতবাড়ির পাশেই চুল্লি তৈরি করা হয়। ফলে আগুন লাগলে তা দ্রুত বসতবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া তামাকচুল্লির আগুনের ছাই বাড়ির পাশেই ফেলে রাখা হয়। দাবদাহে এসব ছাই থেকেও আগুন লেগে যায়। গ্রীষ্মে দাবদাহে এসব বরজের পাটকাঠির বেড়া গরম হয়ে থাকে। এসব বেড়াসংলগ্ন এলাকা দিয়ে যাওয়ার পথে বিড়ি-সিগারেটের আগুন যেখানে-সেখানে ফেলার কারণে প্রায়ই বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন উপজেলার ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানের বরজ ও তামাকচুল্লিতে আগুন লাগার কয়েক মিনিটের মধ্যে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে না যেতেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ায় ২০১৩ সালে এক বছরে ১১৭ খুন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কুষ্টিয়ায় গত এক বছরে ১১৭ খুনের ঘটনা ঘটেছে। বছর জুড়ে চলেছে হত্যা-খুন এবং অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা। কুষ্টিয়ায় খুনের হিংস্রতা, বর্বরতা, নৃশংসতা ও পৈশাচিকতা যেন জাহেলী যুগের এক প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীর সব বর্বরতাকে হার মানিয়ে মায়ের হাতে সন্তান খুন, ছেলের হাতে পিতা খুন, ভাইয়ের হাতে ভাই এমনকি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা খুনের নির্লজ্জ ইতিহাস রচিত হয়েছে এই কুষ্টিয়ায়। লোমহর্ষক ও নৃশংস হত্যাকান্ডের কারণে সমগ্র জেলা আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়। পুলিশ প্রশাসন খুন ঠেকাতে অনেকটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, শ্রমিক, চালক-মালিক, অজ্ঞাত ব্যক্তি, শিশু ও নারীসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে খুন করা হয়েছে। বছরের শুরুতে পুলিশের হাতকড়া লাগানো অবস্থায় এক বিএন
পি নেতা খুনের বিষয়টি যেমন আলোচিত তেমনি বছরের শেষ দিকে জগন্নাথপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়ায় জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও চেম্বার অব কর্মাস ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালকে গুলি করে হত্যা তেমনি ভাবে আলোচিত হয়েছে। তবে অবাক করা বিষয় বছর জুড়ে এসব হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও হোতাদের বেশির ভাগ থেকেছে ধরা ছোঁয়র বাইরে। ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১২ মাসে জেলায় ১১৭টি খুনে ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ৯, ফেব্রুয়ারি মাসে ৯, মার্চ মাসে ১২, এপ্রিল মাসে ৭, মে মাসে ১১, জুন মাসে ১১, জুলাই মাসে ১৩, আগস্ট মাসে ১০, সেপ্টেম্বর মাসে ৯, অক্টোবর মাসে ১০, নভেম্বর মাসে ৯ এবং ডিসেম্বর মাসে ৭টি খুন সংঘটিত হয়েছে। সুত্র জানায়, ৩ জানুয়ারি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার গোস্বামী দূর্গাপুর ইউনিয়নের আড়পাড়া গ্রামে ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে দুই জন নিহত হয়। নিহতরা হলেন-

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) মঙ্গলবার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষ যখন
বিভ্রান্ত হয়ে সত্য ও সঠিক পথ ছেড়ে অধঃপতনের শেষ সীমায় উপনীত হয়। তখনই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পথহারা মানুষকে মুক্তির জন্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেন। জাহেলী যুগে আরব জাহানে যখন নেমে এলো চারিদিকে গাঢ় অন্ধকার ঠিক সেই মুহুর্তে বিশ্বের ভার্গাকাশে উদিত হলো মানবতার মুক্তির দূত মোহাম্মদ (সাঃ)। বহু প্রতিীত নবী মোহাম্মদ (সাঃ) আব্দুল্লাহর ঘরে মা আমেনার কোলে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের ২০ শে আগষ্ট রবিউল আউয়াল চাঁদের ১২ তারিখে সুবহে সাদিকের সময় এ পৃথিবীতে আগমন করলেন। তার আগমনে আকাশ বাতাসে নতুন দিগন্তের সূচনা হলো।

৩০ শালা পানি চুক্তির ১৮ বছর অতিক্রম করলেও ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশ

   খালিদ হাসান সিপাই
বাংলাদেশ ভারত পানি চুক্তির ১৮ বছরেও চুক্তি অনুযায়ী পানি পায়নি বাংলাদেশ। এবারো বাংলাদেশ পদ্মা নদীর পানি অনেক কম পেয়েছে। পানি প্রাপ্যতা যাচাই করতে প্রতি বছরের ন্যায় পর্যবেণ চলছে। এতে বাংলাদেশের আশার পানি চুক্তি জন্য হতাশায় থেকে যাচ্ছে। কারণ এবারও চুক্তি অনুযায়ী পানি পাচ্ছেনা। ৩০ শালা পানিচুক্তি অনুযায়ী পানি না পাওয়ায় ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে পদ্মা গড়াই নদীসহ ১৮টি নদী পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদীতে পানি শূন্যতার কারণে হাডিঞ্জ ব্রীজের ১১টি স্প্যান চরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বৃহত্তর কুষ্টিয়ায় পানির অভাবে কৃষি আবাদে দেখা দিয়েছে মরুময়তা। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুড়া ও যশোর জেলার ১৩টি উপজেলার ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হুমকীর সম্মুখীন হয়েছে। ভারতপ্রেমী সরকারের সময়েও পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলকে মরুময়তার হাত থেকে রার জন্য ১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৩০ বছরের পানি চুক্তি হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী দেব গৌড় ও বাংলাদেশের প্রদানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে হায়দ্রাবাদ হাউজে ঐতিহাসিক ৩০ শালা পানি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে ১লা জানুয়ারী থেকে ৩১মে পর্যন্ত ৩৬ হাজার কিউসেক পানি দেওয়ার কথা। পানি চুক্তির ১৮ বছর অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা পায়নি। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি স্বারের পর থেকেইে ভারত বাংলাদেশকে কম পানি দিয়ে আসছে। পানির অভাবে হাডিঞ্জ ব্রীজ ও লালন শাহ সেতুর নিচে জেগেছে বিশাল চর। পানি শূণ্যতার কারণে চাষাবাদসহ দণি-পশ্চিমাঞ্চলে মরুময়তা দেখা দিয়েছে। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানি কমতে কমতে পদ্মা অনেকটা খালের আকার ধারন করেছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ১৫টি পিলারের মধ্যে ১১টি পিলারের নিচে পানি নেই। পানি শুকিয়ে নদীতে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। আর সেই বালু চরে চলছে চাষ আবাদ। ধু ধু বালুচরের একপাশ দিয়ে স্রোতহীন পদ্মার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পদ্মার শাখা উপশাখা নদীগুলোর অবস্থা আরো করুন। এ অবস্থার বাস্তব অবস্থা পর্যবেনে বাংলাদেশ ভারত যৌথ কমিশনের (জে আরসি) প্রতিনিধি দল হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পয়েন্টে পানি পর্যবেণ করে পানি প্রবাহের ফলাফল দিলেও তাতে কোন ফল আসেনি।
হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে জেগে আছে বিশাল চর, পিলারগুলো শীর্ণ ঠায় দাড়িয়ে আছে বালির উপর। পদ্মা নদীর চরে কৃষকরা আবাদ করছে বিভিন্ন সবজী ও ফসলের। আখের আবাদ হয়েছে অনেক। পদ্মার চরে এখন কৃষকদের হাল চাষের মৌসুম।
পানি না থাকায় কৃষকদের ব্যস্ততা বেড়েছে।
তথ্যসুত্রে জানাগেছে, বাংলাদেশ-ভারতের পানি চুক্তির ১৮তম বছর অতিক্রম করছে। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ থেকে ১০ হাজার মিটার ভাটিতে ভারত- বাংলাদেশ পানি পর্যবেণ টিম পানির প্রবাহ ও পানির স্তর পরিমাপ করে। বাংলাদেশ পদ্মা নদীর পানি এবারও ৮-১০ হাজার কিউসেক কম পেয়েছে। পানিচুক্তির ১৮ বছর অতিক্রম করলেও পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে ভারতের তাবেদারী আওয়ামী সরকারও নিরবতা পালন করছে। ফলে দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চল মরুময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছে।
তবে একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ৩০ বছরের পানি চুক্তি ১ জানুয়ারি ১৮তম বর্ষে পদার্পণ করছে।
হাইড্রোলজি বিভাগ সূত্র জানায়, দুই সদস্যের ভারতীয় টিম ৫০ দিন ব্যাপী পর্যায়ক্রমে পদ্মার পানি পর্যবেণ করবে। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুম। প্রতি ১০ দিনকে একটি বা সাইকেল হিসেবে ধরা হয়। আর প্রতি ৩০ দিনকে তিনটি চক্রে ভাগ করা হয়েছে। এভাবেই পানি পরিমাপ চলবে।
চুক্তির প্রথম বছর অর্থাৎ ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পানির স্তর ছিল সাত দশমিক ২৫০ মিটার। এ পয়েন্টে প্রতি বছর পানির স্তর কমে আসছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর তিন মিটারে নেমে আসে। আশঙ্কাজনকহারে পদ্মায় পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় পাবনার ২০-২৫টি নদী ইতিমধ্যে তার নাব্যতা হারিয়েছে। চুক্তির প্রথম বছরে ১ থেকে ১০ জানুয়ারি সাইকেলে বাংলাদেশের পানি পাওয়ার প্রাপ্যতা ছিল ৬৭ হাজার ৫১৬ কিউসেক। সেখানে পাওয়া যায় ৭০ হাজার ১২২ কিউসেক। শর্তানুযায়ী চুক্তির প্রথম বছরের প্রথম সাইকেলে পানি পাওয়া কিছুটা বেশি হলেও পরে ভারত বাংলাদেশকে একতরফা পানি কম দিয়ে আসছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়।
প্রজাতন্ত্রী ভারত সরকার ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২ দেশের জনগণের কল্যাণ সাধনের অভিন্ন ল্েয অনপ্রাণিত হয়ে বন্ধুত্বপূর্ন ও সুপ্রতিবেশী সূলভ সম্পর্ক উন্নয়ন এবং জোরদার করার দৃঢ় প্রত্যয়ে ৯৬’র ১২ ডিসেম্বর দু’ দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ১২ অনুচ্ছেদে ফারাক্কায় গঙ্গার পানিবণ্টন সংক্রান্ত চুক্তি স্বার করে। চুক্তির ১ম অনুচ্ছে অনুযায়ী ভারত বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দিতে সম্মত হয়েছে তা ছাড়া হবে ফারাক্কায় বলে উল্লেখ করা হয়। ২য় অনুচ্ছেদে বলা হয় ১লা জানুয়ারী থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ফারাক্কায় গঙ্গার পানিবণ্টন হবে এবং পরিশিষ্ট-১ এর আওতায় পানি বণ্টন ব্যবস্থায় যে ফর দাাঁড়াবে তার একটি নির্দেশমূলক তফসীল পরিশিষ্ট-২ এ দেওয়া আছে। (২) ফারাক্কার গত ৪০ বছরে (১৯৪৯-১৯৮৮) ১০ দিনের গড় পানি পানি প্রাপ্তির ভিত্তিতে পরিশিষ্ট -২ এ নির্দেশমূলক তফসীল প্রদান করা হয়েছে। ফারাক্কার ওপরে উল্লেখিত ৪০ বছরের গড় পানি প্রবাহ বজায় রাখার জন্য উজানের দেশ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে। (৩) কোন ১০ দিনের সময়কালে ফারাক্কার পানির প্রবাহ ৫০ হাজার কিউসেকের নিচে নেমে আসলে ২ দেশের সরকার কোন পরে তি না করে সমতা ও ন্যায়পরায়নতার নীতিমালার ভিত্তিতে জরুরীভাবে পানি প্রবাহে সমন্বয় সাধনের জন্যে অবিলম্বে আলোচনায় বসবে।
৩ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে ফারাক্কায় বাংলাদেশের জন্য যে পানি ছাড়া হবে তা ভারতের যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার ছাড়া ফারাক্কা এবং গঙ্গার মধ্যবর্তী স্থান যার উভয় তীর বাংলাদেশ ভূখন্ড, ২০০শত কিউসেকের বেশি হ্রাস করা হবে না।এই চুক্তি স্বারের পর সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে ২ সরকারের মনোনীত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে। এই কমিটি যৌথ কমিটি নামে অভিহিত হবে। যৌথ কমিটি হার্ডিঞ্জ ব্রীজসহ ফারাক্কা, ফারাক্কার নিচে, ফিডার ক্যানেলে ও নেভিগেশন লকে দৈনন্দিন প্রবাহ পর্যবেণ ও রেকর্ডের জন্য উপযোগী টিম গঠন করবে। বিগত সময়গুলিতে এ টিম গঠন করে বাংলাশে চুক্তি অনুযায়ী পানি পেয়ে রিপোর্ট পেশ করলেও ভারত সে ব্যাপারে কোন তোয়াক্কা করেনি।
২০১৪ সালের জন্যও ঠিক অনুরূপ পর্যবেণ টিম তৈরি করা হয়েছে ৫ সদস্যের। যারা এখন কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রীজের নিচে পর্যবেণ করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে মে’র শেষ দিন পর্যন্ত ভারত ফারাক্কা পয়েন্টে ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৮৮ সাল এই চল্লিশ বছরের গড় হারে বাংলাদেশ পানি পাওয়ার কথা। এছাড়াও শুষ্ক মৌসুমে প্রতি সেকেন্ডে ৩৫ হাজার ঘনফুট পানি প্রবাহের কথা রয়েছে। কিন্তু চুক্তির শুরু থেকেই এ পানি কম দিয়ে আসছে ভারত। তাদের ওয়াদা তারা পালন করেনি। পানিচুক্তি একটি নিষ্ফণ চুক্তিতে পরিণত হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, হিমালয়ের বরফগলা পানিতে গঙ্গা নদীর অববাহিকার আয়তন ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪০৪ বর্গকিলোমিটার। পদ্মা থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রজেক্টে পানির জোগান প্রতি বছর দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনমিটার। পানি প্রবাহের হার ৪ লাখ ৪২ হাজার ১৭০ ঘনমিটার প্রতি ২ কিলোমিটার। ২ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে গঙ্গা নদীর অববাহিকায় ভারত ১ কোটি ৩০ লাখ হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছে। অন্যদিকে দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে প্রজেক্ট) সেচ প্রকল্প, পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প, পানাসি (পাবনা-নাটোর ও সিরাজগঞ্জ) প্রকল্প, বরেন্দ্র প্রকল্পসহ বিভিন্ন প্রকল্পের হাজার হাজার একর জমিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও পাম্প ব্যবহার করে সেচ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। জিকে প্রজেক্টে ১ লাখ ৯৭ হাজার একর জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার একর আবাদি জমি। যে জমিতে এখন আখ, বাদাম (যে ফসলে পানির প্রয়োজন কম হয়) চাষে ব্যস্ত রয়েছেন নদীপাড়ের কৃষক।
কুষ্টিয়ার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ও পানি উন্নয়নবোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে। নলকুপে পানি পাচেছনা। বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। কৃষি আবাদে বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এতে সেচ প্রকল্পের অধীনে ১ল ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলাসহ ৫ জেলায় মরুময়তা দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুড়া ও যশোর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ করা চাষীদের দূরহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পানি চুক্তির ১৮ বছর পার হলেও চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ পানি না পাওয়ায় ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে এদেশের নদী নালা খাল বীল পানি শূণ্য হয়ে পড়েছে। ভারতের সাথে চুক্তি করে সেই চুক্তি অনুযায়ী পানি পাওয়ায় দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে শুরু করেছে। হুমকীর সম্মুখীত হতে চরেছে দেশের ৫ কোটি মানুষের জীবন। দেশের মাটি ও মানুষের জীবন বাঁচাতে পানি চুক্তির যথার্থ বাস্তবায়ন করে এ সরকার জনগণের জানমালের নিরাপত্তা করবেন এটাই দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চল মানুষের দাবী।