বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৪

কুষ্টিয়ার আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥
কুষ্টিয়ায় ভালো নেই আশ্রয়ন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা। এসব আশ্রয়ন প্রকল্পে নানা অনিয়মের ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অনেক সুবিধা থেকে বঞ্চিত এখানে বসবাসকারীরা। ফলে ভাসমান মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন তো ঘটেইনি বরং তাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। অনেকই আশ্রয়ন প্রকল্পে আসার পর পালিয়ে গেছে। জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলায় ৬ উপজেলায় মোট আশ্রয়ন প্রকল্পের সংখ্যা ২৭টি। আর গুচ্ছ গ্রাম ১৬টি। আর বাস্তবায়নের পথে ২টি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্প গুলো হচ্ছে গড়াই-১, চৌড়হাস, আলামপুর-১ ও জুগিয়া। এছাড়াও এই উপজেলায় জগতি নামে একটি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এসব প্রকল্পে ৩১৫টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হয়েছে। কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায় ১৩টি আশ্রয়ন প্রকল্প ও ১টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। আরেকটি বাস্তাবায়নের পথে। উপজেলার গড়াই ও মরা কালীগঙ্গা নদীর উপকূলীয় এলাকায় বিভিন্ন সময়ে সরকারিভাবে গড়ে উঠেছে এসব আবাসন প্রকল্প। কুমারখালী কয়া ইউনিয়নের কয়া-১ আশ্রয়নে ৫টি ব্যারাকে ৫১টি, কয়া-২ আশ্রয়নে ২১টি ব্যারাকে ২’শ ১০টি, নন্দলালপুর ইউপির হাবাসপুর আশ্রয়নে ১১টি ব্যারাকে ১’শ ২০টি, চাপড়া ইউপির কবুরহাট আশ্রয়নে ৫টি ব্যারাকে ৫০টি, বাগুলাট ইউপির ৫টি ব্যারাকে ৫০টি, যদুবয়রা ইউপির লালন-১ আশ্রয়নে ৫টি ব্যারাকে ৫০টি, লালন-২ আশ্রয়নে ৪টি ব্যারাকে ৪০টি, লালন-৩ আশ্রয়নে ৬টি ব্যারাকে ৬০টি, লালন-৪ আশ্রয়নে ৬টি ব্যারাকে ৬০টি, বাগুলাট ইউপির দুধ কুমড়া আশ্রয়নে ৭টি ব্যারাকে ৭০টি পরিবার, বাশগ্রাম আশ্রয়ন প্রকল্পে ৭০টি পরিবার, হিজলাকর-১ আশ্রয়ন প্রকল্পে ৫০টি পরিবার ও হিজলাকর-২ আশ্রয়ন প্রকল্পে ৬০টি পরিবার সর্বমোট ৯’শ ৪১টি পরিবার বসবাস করছেন। এছাড়াও এই উপজেলায় শিলাইদহে রয়েছে ১টি গুচ্ছ গ্রাম। সেখানে ৩৫টি পরিবার রয়েছে। ভেড়ামারা উপজেলায় রয়েছে ২টি আশ্রয়ন প্রকল্প। ফয়জুলাহপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে ১’শ টি এবং চর গোলাপনগর প্রকল্পে ৮০টি পরিবার রয়েছে। এই উপজেলার বাহিরচরে একটি গুচ্ছ গ্রাম রয়েছে। সেখানে ২৮টি পরিবারকে পুর্নবাসিত করা হয়েছে। খোকসা উপজেলায় হিলালপুর ওসমানপুরে একটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ৩০টি পরিবার রয়েছে। এই উপজেলার গনেশপুর গুচ্ছগ্রামে ৬০টি, হিজলাবট-১ গুচ্ছগ্রামে ১’শ টি পরিবার, হিজলাবট-২ গুচ্ছগ্রামে ৬০ পরিবার, হিজলাবট-৩ গুচ্ছগ্রামে ৫০টি পরিবার, ওসমানপুর গুচ্ছগ্রামে ৫০ টি পরিবার, ভবানীপুর গুচ্ছগ্রামে ৪০টি পরিবার রয়েছে। মিরপুর উপজেলায় ৬টি আশ্রয়ন প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে খন্দক বাড়ীয়ায় দুটি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১’শ ১০টি ভূমিহীন পরিবার রয়েছে। এ উপজেলার সদরপুর ও আমলা সদরপুরে দুটি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। দৌলতপুর উপজেলায় দু’টি আশ্রয়ন প্রকল্প ও ৪টি গুচ্ছগ্রাম রয়েছে। এর মধ্যে মথুরাপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে ১’শ ৩০টি পরিবার রয়েছে। দৌলপুর উপজেলার বাগোয়ান-১ প্রকল্পে ২০টি পরিবার, বাগোয়ান-২ প্রকল্পে ২৫টি পরিবার, সরিষাডুলি প্রকল্পে ২২টি পরিবার ও মথুরাপুর প্রকল্পে ২২টি পরিবার বসবাস করছে। এসব আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, সরকারের দেয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন না হওয়ায় তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে জানান। এসব প্রকল্পে বসবাসরত বাসিন্দাদের যাতায়াত সুবিধার্থে আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এসব আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণের পর থেকে অদ্যাবধি রণাবেণে যথাযথ পদপে গ্রহণ না করায় আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী এক সেডে ১০টি পরিবারের জন্য ২টি স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা ২টি গোসল খানা ১টি টিউবয়েল থাকার বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব পায়খানা, খোসল খানা ও টিউবওয়েল অকেজো রয়েছে। বর্তমানে ঐ সব আশ্রয়নের বসতিরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও সরকারি আনুকূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এখন পর্যন্ত অনেক ব্যারাকে বসবাসরত কয়েকটি পরিবারের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রি ও নাম জারি করা হয়নি। আবার অনেক পরিবার দলিল পাওয়ার পরও সরকারি নিয়ম উপো করে অন্যের নিকট রুম ভাড়া দিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করছেন। কারণ হিসেবে জানা যায়, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আশায় অনেকেই ভূমিহীন সেজে তৎকালীন সরকারের নেতাদের সুপারিশে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়। আবাসনগুলোতে কমিউনিটি সেন্টার স্বাস্থ্য শিা, কৃষি, ুদ্র ব্যবসা, হাঁস-মুরগি পালন, সমবায় পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ, কুটির শিল্প ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করতে অর্থিক সুবিধা ও প্রতি পরিবারকে খাস জমি, বিনা সুদে ুদ্র ঋণ, ভিজিএফ কার্ড প্রদান করার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব কিছুই এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। কুমারখালী উপজেলার লালন-১, লালন-২, লালন-৩ ও লালন-৪ আবাসন প্রকল্পের সভাপতি তাইজাল আলী বলেন, গড়াই নদীতে জেগে উঠা চরে ৪টি আশ্রয়ন প্রকল্প। বর্ষা মওসুমে সেগুলো ভেঙ্গে গড়াই গর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। লালন আবাসনের বাসিন্দাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কোনো সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। অধিকাংশ টিউবওয়েলের দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ায় পানীয় জলের অভাব দেখা দিয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন