শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪

কুষ্টিয়াসহ দণি-পশ্চিমাঞ্চলের দেড় শতাধিক অস্ত্র লুট মামলা ফাইল বন্দী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাসের জনপদ কুষ্টিয়াসহ দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলে চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের হাতে লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে তেমন কোনো বড় সফলতা দেখাতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী। অস্ত্র লুটে
র দেড় শতাধিক মামলাও দীর্ঘদিন যাবৎ রয়েছে ফাইল বন্দী।
তথ্য সুত্রে জানা যায়, সন্ত্রাস কবলিত অঞ্চল কুষ্টিয়ায় ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পুলিশ ও আনসারের মোট ১৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র লুণ্ঠিত হয়েছে। অস্ত্র লুটের সময় চরমপন্থীরা হত্যা করেছে পুলিশ ও আনসারের ৮ সদস্যকে। এসব হত্যাকা-ে জড়িতদের ধরতেও ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এ ঘটনায় করা মামলাগুলো প্রয়োজনীয় তদন্ত ও স্যা প্রমাণের অভাবে বছরের পর বছর ফাইল বন্দী রয়েছে। একের পর এক অস্ত্র লুটের ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠনগুলোর সদস্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এ অঞ্চলের বিভিন্ন ক্যাম্প ও ফাঁড়িতে অবস্থানরত পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা অসহায় অবস্থায় চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। কেননা চরমপন্থীদের হাতে রয়েছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। তারা সংঘবদ্ধভাবে ঝটিকা আক্রমণ চালায় বিভিন্ন পুলিশ ফাঁড়ি ও টহল পুলিশের ওপর। লুট করে অস্ত্র। বীরদর্পে চলে যাওয়ার আগে রেখে যায় তাদের সংগঠনের বিভিন্ন লিফলেট ও প্রচারপত্র।
সূত্র জানায়, ১৯৯০ সালে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর আনসার বাড়িয়ায় চলন্ত ট্রেনে জিআরপি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা সাতটি রাইফেল লুট করা হয়।
১৯৯১ সালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার হালসা স্টেশন থেকে একটি রাইফেল, ৯২ সালে যশোরের বাবলাতলায় পুলিশকে ছুরিকাঘাত করে দুটি রাইফেল, ৯৪ সালে যশোরের চাড়াভিটা বাজারে এক পুলিশকে খুন করে একটি রাইফেল, ঝিনাইদহের সুন্দরপুর এলাকায় চলন্ত ট্রেনে জিআরপির কাছ থেকে একটি রাইফেল, ১৯৯৫ সালে যশোরের কোনা বাজা-ডোবরা কৃষি ব্যাংক থেকে একটি রাইফেল, হামিদ আর্মস কোম্পানি থেকে তিনটি বন্দুক, একটি রাইফেল, দর্শনার উদলি থেকে জিআরপির এক সদস্যকে হত্যা করে চারটি রাইফেল, ৯৬ সালে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার
রাড়–লি পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে সাতটি রাইফেল, ৯৭ সালের যশোরের বাঘারপাড়ায় একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে জখম করে একটি রিভলভার, একই বছরের ডিসেম্বরে খুলনার রূপসার সি ফুডে হামলা চালিয়ে পাঁচটি রাইফেল ৩০ রাউন্ড গুলি, ৯৮ সালে খুলনা থেকে কয়রাগামী লঞ্চে আনসারের ওপর হামলা চালিয়ে তিনটি রাইফেল, একই বছর আগস্টে খুলনা কেবল ফ্যাক্টরিতে হামলা চালিয়ে চারটি রাইফেল, ছয়টি বন্দুক, সহস্রাধিক রাউন্ড গুলি, একই বছর আগস্টে ঝিনাইদহ জেলার কালিগঞ্জের বারবাজারের কাছে আন্তঃনগর ট্রেনে হামলা চালিয়ে একজন আনসার কমান্ডারকে হত্যা করে একটি সাবমেশিনগান, সাতটি রাইফেল লুট, একই বছর সেপ্টেম্বরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মাল খানা থেকে দুটি রাইফেল ১২টি বন্দুক, পাঁচটি রিভলভার, পাঁচটি পিস্তল, ওই বছর নভেম্বরে নগরীর বাগমারা এলাকায় একটি বাড়িতে হানা দিয়ে দোনালা একটি বন্দুক, একই বছর বাঁশখালি থেকে চারটি রাইফেল, ৯৯ সালের জানুয়ারি মাসের আকিজ জুট মিলের আনসারদের কাছ থেকে ১২টি রাইফেল।
২০০০ সালের কুষ্টিয়া সোনালী ব্যাংক থেকে একটি রাইফেল, ২০০১ সালের ডিসেম্বরে রূপসায় একটি দোকান থেকে দোনালা একটি বন্দুক, ২০০২ সালের মার্চে কাস্টম ঘাট এলাকায় কেএমপি পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একটি শটগান, একই বছরের যশোরের কেশবপুর জনতা ব্যাংকের নিরাপত্তা প্রহরীর একটি রাইফেল, ২৪ ডিসেম্বর ঝিনাইদহে পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যা করে একটি পিস্তল, জানুয়ারি মাসে খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার মাঝিরগাতির একটি বাড়ি থেকে দোনালা বন্দুক, একই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে নড়াইল জেলায় কালিয়ার হাসানের বাড়ি থেকে একটি দোনালা বন্দুক,
২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে কুষ্টিয়া টেক্সটাইল মিলে নিরাপত্তা রীদের কাছ থেকে দুটি বন্দুক, মার্চে খুলনা নগরীর শেখ পাড়ায় দুই পুলিশকে হত্যা করে একটি শটগান, একই বছরের এপ্রিলে দৌলতপুর জুট মিলের আনসারদের কাছ থেকে ১৯টি রাইফেল ৬০০ রাউন্ড গুলি, এপ্রিলে বাগেরহাটের ফকিরহাট এলাকায় দুই পুলিশকে হত্যা করে একটি এসএলআর ও একটি রাইফেল সন্ত্রাসীরা লুট করে নিয়ে যায়।
বিগত ১৫ বছরে রাড়–লি পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়া অস্ত্র উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার তেমন কোনো সাফল্য নেই। অস্ত্র উদ্ধারের পরপর পুলিশ, বিডিআর যৌথ অভিযানে নামলেও ফলাফল থাকে প্রায় শূন্য, এমনকি কালেক্টরেট ভবনে সার্বক্ষণিক পুলিশি পাহারা থাকা সত্ত্বেও কেএমপির মালখানা থেকে লুটকৃত অস্ত্রগুলো আজো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। লুণ্ঠিত অস্ত্রের মধ্যে পরে মাত্র ১০টি অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ অঞ্চলে বিভিন্ন সময় যৌথবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশের অপারেশন কিনহার্ট, স্পাইডার ওয়েব, প্র্রভৃতি অভিযান পরিচালিত হলেও লুণ্ঠিত অস্ত্রের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। আটক হয়নি হত্যাকারীরা।
অস্ত্রে লুটের মামলা দীর্ঘদিন রয়েছে ধরা ছোয়ার বাইরে। কুষ্টিয়াসহ দেশের দণি-পশ্চিমাঞ্চলে পুলিশ ফাঁড়ি ও জিআরপি ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা এখনও আতংকে দিন কাটাচ্ছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন